A Story of Coloreless ColorPaint
রংহীন রংতুলির গল্প
মেয়েটার নাম সাবিরা, শ্যামলা চেহারার দেখতে ছিমছাম। মেয়েটা জানেও না তার চোখের রহস্যে খেলা করে একটা ছেলে। ছেলেটা কিছুটা বেখেয়ালী, উস্কোসুস্ক চুল,ভীষণ ধরণের অগোছালো। অনেকে বলে পাগলাটে টাইপের। গুটি কয়েক বন্ধুর সাথে ছাড়া মিশতেও পারে না। ক্লাসের সবাই একটু এড়িয়ে চলে ওকে, মুখ গুজে থাকে ফোনের স্কিনে, কি যেন ছাতার মাতা লেখে। লেখালিখি যে পারে তা মনে হয় না, লেখকদের যে উদ্দীপ্ত জ্যোঁতি থাকে তার মধ্যে তা নেই। উদ্ভট পোষ্ট দেয় মাঝে মাঝে, দেশের রাজনীতি, সমাজনীতি, রাষ্ট্রনীতি নিয়ে কোন মথাব্যথা নেই তার। তাহলে সে কি লেখে!
মনে হয় কবিতা লেখে! না তার একটা কবিতা কোথাও প্রকাশ হয়নি! উপন্যাস লিখবে! সে ধর্য্য তার নেই, দেখলেই বোঝা যায়। যতটুকু জেনেছি দু-তিন টি ছোট গল্প লিখতে চেষ্টা করেছে। কিন্তু সেগুলে কোন দিক দিয়েই গল্পের মর্যাদা পায় না। আরও একটা কথা, শুনেছি সে নাকি নামহীন কোন ওয়েবপেইজে কন্টেন্ট লিখে! মাঝে মাঝে টাইমলাইন শেয়ার দিয়ে কাউন্ট করে কত তম লেখা তার! পাগল না হলে কেউ এসব করে!
সাবিরা নামের যে মেয়েটির কথা বলেছি, সে সদ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পা দিয়েছে। বাড়ি ছেড়ে, বাবা-মা ছেড়ে অচেনা শহরে নিজেকে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করচ্ছে। খুব সাধারণ একটা মেয়ে! মায়া মায়া মুখ, আর ভীষণ উচ্ছ্বাসিত ঝলমলে হাঁসি। তবে খুব বেশি ঘোরপ্যাঁচ বোঝে না।
একদিন উষ্কোসুষ্কো ছেলেটি ফেসবুকে স্ক্রল করছিল৷ হঠাৎ তার সামনে একটা আইডি ভাসতে দেখল। সবসময় এসব ইগর করে চলে সে। তবে কেন জানি আজ একটু থেমে গেল! মেয়েটির প্রোফাইল পিকচারটা দেখে হয়তো কিছুটা থমকে দাঁড়িয়েছে! চোখগুলো ডাঙর ডাঙর, মনে হচ্ছে ছেলটির দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে, আর সাথে একরাশ হাঁসি লেগে আছে মুখে, হিজাব পড়েছে মাথায়। দেখে কিছুটা কৌতুহলী হয়ে প্রোফাইলে ঢু মারতে ইচ্ছে হলো ছেলেটির। কৌতুহল সে এটা করল, বিশেষ কিছু না ভেবেই।
প্রোফাইল ঘেঁটে খুব বেশি কিছু পেল না সে। দেখলে হাতে গোনা কয়েকটি পোস্ট, আর কিছু পেজ শেয়ার করেছে মেয়েটি। মোটামুটি ছোট খাটো রিসার্চ করে ক্লান্ত হয়ে প্রোফাইল থেকে বেরিয়ে আসল। সেদিন সেখানেই স্টোরি শেষ হয়ে যেত হয় তো!
তবে পরদিনও দেখলে মেয়েটির প্রোফাইল সামনে শো করছে। একবার ভাবলো তাতে কি আসে যায় তার! ভেবেছিলো হাইড অপশনে ক্লিক করে আইডি টা সরিয়ে দেবে সামনে থেকে। বারবার মেয়েটাকে দেখলে, সেই ফ্যাল ফ্যাল চোখ তাকে টানতে পারে। তবে পরে কি জানি কি কাজে ব্যস্ত হয়ে ভুলে গিয়েছিল।
তার পরদিন ঠিক সেম ঘটনা! সে আবারও প্রথম দিনের মত পুরো প্রোফাইল ঘাটলো, ছবিগুলো দেখলো কয়েক বার। কি ধরনে পোস্ট শেয়ার করে বুঝতে চেষ্টা করল। সে বারের মত পাঠ চুকে গেল।
পঞ্চম দিন কি জানি কি ভেবে ছেলেটি মেয়েটিকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট দিয়ে বসলো। ভেবেছিল হয়তো মেয়েটি এক্সেপ্ট করবে না। আর যদি করেও তবে সে কি বলবে মেয়েটিকে? হাই, হ্যালো বলবে, নাম জিজ্ঞেস করবে নাকি অন্য কিছু জিগ্যেস করবে! আচ্ছা সে কি দিয়ে শুরু করবে? আবার পরঃক্ষণে ভাবলো যদি মেয়েটি মেসেজ সিন না করে?
যদি মেয়েটা উত্তর না দেয়, যদি এড়িয়ে চলে! এসব আবল তোবল ভাবতে তাকে সে। ক্লাস শেষে যখন ছেলেটির বন্ধুরা আড্ড দিতে যাচ্ছে বাইরে। তখন সে লাইব্রেরিতে গিয়ে বসলো। কিছুক্ষণ পরে দেখেলো ওয়াইফাই কানেক্টেড হওয়ায় ফেসবুক থেকে একটা নোটিফিকেশন এসেছে। দেখলো 'রংহীন রংতুলি' এক্সেপ্ট ইউর ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট।
ছেলেটি ফেসবুকে ঢুকলো, আবার একবার দেখলো মেয়েটির প্রোফাইলটি। ভাবল কিছু একটা লিখবে। তবে লেখা হয়নি, মেয়েটি যদি খারাপ ভাবে, ডিস্টার্ব হয় এই ভেবে। অন্যের ডিস্টার্ব করে কি লাভ তার। সে একা থাকা যখন উপভোগ করা শিখতে চাই, তখন মানুষকে ইগনোর করে চলা শেখাটাই আগে দরকার।
সেদিন আর কিছু লিখল না সে। পরদিন দেখল মেয়েটি তার মাইডে তে দিয়েছে একটা বাসাবাড়ির ছবির সাথে ক্যাপশন 'মাই ফিচার ড্রিম'। বিষয়টিকেও ইগনোর করলো সে। রাতে আবার ও স্ক্রল করতে করতে সেই মাইডে। কৌতূহল নিয়ে কমেন্ট করলে কি হলো বুঝলাম না!
অল্প কিছুক্ষণ পর অপর প্রান্ত থেকে রিপ্লাই আসলো। হুম, আমার ফিউচার ড্রিম। সেই থেকে শুরু হলো। তারপর কথার ঝুলি নিয়ে বসল দু'জন। দু'জনের সময় কেটে যেতে থাকল তড়িৎ গতিতে। কারও খেয়াল নেই সময়ের দিকে, সময় যেখানে আপেক্ষিক!
আস্তে আস্তে ছেলেটি মেয়েটিকে, মেয়েটি ছেলেটিকে জানতে শুরু করল। ছেলিটি কেমন জানি তাকিয়ে তাকে মেয়েটির প্রোফাইলে। ভাবে, জিগ্যেস করবে তুমি এমন ভাবে তাকিয়ে থাক কেন? তবে সাহস হয় না, যদি মেয়েটি কিছু মনে করে৷ ওহ্, তারমধ্যে মেয়েটি কথা বলতে বলতে হঠাৎ বলে ফেলল, আমরা যদি চিঠি দেয়া-নেয়া করি তাহলে কেমন হয়!
আচমকা এমন করে কেউ বলবে চিঠির কথা ছেলেটি ভাবতে পারে নি! উত্তরে বলে উঠল, ওহ্ অনেক দারুণ হবে! মেয়েটি জিজ্ঞেস করে সে কিভাবে চিঠি লিখবে? তার কোন চিঠি লেখার অভিজ্ঞতা নেই, তবে বইয়ে পড়েছে। আগে পরীক্ষায় আসবে বলে চিঠি লেখার নিয়ম জানে। ছেলেটির সেম। বই পড়া জ্ঞান যাকে বলে! মনে মনে এক ধরনের ভাল লাগা কাজ করল তাদের।
মেয়েটি আবদার করে বসল তাকে প্রথমে লিখতে হবে, তারপর ছেলেটির কাছে সে লিখবে। ছেলেটি মেনে নেই প্রোপজালটি। সেদিন রাতেই কিছুটা লেখে সে। তারপরের দিন মেয়েটি ক্লাস শেষ করে ক্লান্ত শরীরে, সোজাসুজি পোস্ট অফিস যায় ঠিকানা কালেক্ট করতে।
নতুন শহর, খুব বেশি কিছু জানে না, চেনে না সে। তবে, কিসের তাড়নায় যেন সে ছুঁটছে, তা সেও জানে না। হয়তো, তার স্বপ্ন পূরণ করতে, হয়তো নতুন কিছু পেতে! বারবার সে ছেলেটিকে বলতে থাকে, তার একটা স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে।
ছেলেটিও চাইছিল মেয়েটির ইচ্ছে পূরণ করতে। জীবনে প্রথম চিঠি লিখবে, সেটি পোস্ট করবে পোস্ট অফিসে যেয়ে। যদি পোস্ট মাস্টার জিজ্ঞেস করে কাকে পাঠাবেন? তখন সে কি উত্তর দিবে? এসব মাথায় ঘুরছিল তার।
এসব করতে করতে একদিনেই লিখে পোস্ট করে দেয় তার প্রথম চিঠি, একটা বার্তা যেটা কেউ লেখে তার প্রেমিকাকে! অন্য প্রান্তের মানুষটি এখনও অপেক্ষা করে রয়েছে তার লাইফের প্রথম চিঠিটা পাওয়ার জন্য! আশায় বুক বেঁধে আছে চমকে উঠবে চিঠিটি হাতে পেয়ে!
চিঠি যখন দুইপ্রান্তের মাঝখানে, তখন তারা পুরোদমে কথার ঝুলি নিয়ে বসে আছে দুজনে। হঠাৎ সেদিন ছেলেটি বলেছে সে মেয়েটিকে ভালবাসে। মেয়েটির প্রথম প্রথম না বলেছিল। তবে সে ভালবাসে ফেলেছে। এভাবে চলছে তাদের সামনের পথচলার গল্প! একটি ছয় বছরের স্বপ্নভরা গল্প তাদের শুরু হয়েছে! রংহীন রংতুলি রাঙাতে চলেছে তার সেই অগোছালো ছেলেটির জীবন!
বিদ্রঃ এটা কোন গল্প নয়। এটা রঙিন কোন স্বপ্ন! এটা কোথায় প্রকাশিতও হবে না, থাকবে শুধু মেয়েটির কল্পনা রাজ্যে, মেয়েটির স্বপ্ন হয়ে।
Comments
Post a Comment