Little Princes 2 (রাজকন্যা ২)

Image courtesy: ebay.co.uk
বাবার মুখ ছোট্ট নরম কোমল হাতে খামচে দেয়া, লুকচুরি খেলা আর অফিস যাওয়ার সময় ওর বাবার কোর্টের প্রান্ত শক্ত করে ধরে থেকে মায়া মায়া চোখে তাকিয়ে থাকা অদ্রিতার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। বাবা-মেয়ের খুনসুটি ও ভালবাসা দরজার কাছে দাঁড়িয়ে দেখতে থাকি। মাঝে মাঝে আমি কিছুটা রাগ করি। কিন্তু তাতে কারো বিশেষ কিছু যায় আসে না। বাবা-মেয়ে আমাকে একটু পাত্তা পর্যন্ত দেয় না!
অদ্রিতার বয়স দুই বছরের কাছাকাছি। ওর বাবা প্রায়ই বলে মেয়ে তার দেখতে ঠিক আমার মত। শ্যামলা, নাক কিছুটা চ্যাপ্টা হলে ও চোখ পটলচেরা। কিন্তু চুলগুলো কার মত ঠিক জানা নেই। তবে আমি দেখতে আসলে কেমন? এবিষয় কখনো নিজের ভাবনা প্রগাড় হয়নি। একটা মানুষ দেখতে কেমন সেটা মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি ও বিশ্লেষণী ক্ষমতার উপর নির্ভর করে। কারো কাছে কৃষ্ণবর্ণ দেবীর উপমা, আবার কারো কাছে ফর্সা ত্বক সর্গের হুরপরীর সদৃশ।
বাবা চলে যাওয়ার পর অদ্রিতা মাঝে মাঝে কান্না করে আবার কখনও বা মন খারাপ করে বসে থাকে। ওকে শান্ত করতে আমার কিছুটা বেগ পেতে হয়। কখন বা রুপকথার গল্প বলে, কখন বা টিভির কার্টুন দেখিয়ে অথবা খেলনার পরসা সাজিয়ে বসতে হয়। ও রুপকথা বোঝে কিনা জানি না। দু'বছর বয়সে বোঝার কথাও না। তবে আমার মুখের দিকে এক নজরে চেয়ে থাকে। মনে হয় মায়ের ঠোঁটের নড়াচড়া শিশুদের কাছে বিশেষ কিছু!
তবে, ওর সাথে বকবক করতে আমার খারাপ লাগে না। ওর বাবা যখন অফিসে থাকে তখন ও আর আমি এই দুটো প্রাণী ছাড়া আর কেউ নেই। আগে খুব খারাপ লাগত যখন অদ্রিতা ছিল না। পুরো বাড়িতে আমাকে একা থাকতে হত। টিভি সিরিয়াল আর রিমোট নিয়ে টিপাটিপ করতাম। তবে তা বেশিক্ষণ ভাল লাগতো না। তাই বারান্দায় বসে বই পড়তাম। ওর বাবা প্রতি দু-তিন দিন পরপর অফিস থেকে ফেরার সময় আমার জন্য বই কিনে আনতো।
আমি বই পড়তে খুব ভালবাসি। তবে সেটা বেশি দিনের অভ্যাস নয়। আগে আমি পড়তে পরতাম না! সময়টা খুব বেশিদিন আগের না। তিন কি সাড়ে তিন বছর আগেও আমি এই সভ্য সমাজের অভিবাসী ছিলাম না। আমার জন্ম কোথায় হয়েছিল তা আমার জানা নেই। এমনকি আমি আজ জানি না আমার বাবা মা কে ছিল?
শুনেছি আমি যখন খুব ছোট তখন আমাকে কে যেন ডাস্টবিনের কিছুটা দূরে ফেলে রেখে গিয়েছিল। সেখান থেকে কোন সভ্য মানুষ আমাকে কুড়িয়ে এনে বড় করেনি! আমাকে কোলে তুলে নিয়েছিল একজন অন্ধকারে বাসিন্দা। একজন পতিতা।
রাতে যখন সে সদ্য এক সভ্য সমাজে বাসকারী বাসিন্দার লালসা মিটিয়ে ক্লান্ত শ্রান্ত দূষিত শরীর নিয়ে পতিতালয়ে ফিরছিলো। রাস্তার পাশে পড়ে থেকে, তখন আমার কান্না প্রতিধ্বনিত্ব হচ্ছিলো বাতাসে। সেখান দিয়ে বড় বড় গাড়ি, রিক্সা করে, এবং হেঁটে যাচ্ছিল শত শত ভদ্র সমাজ। কেউ কেউ আমার কান্নায় কিছুটা সময়ের জন্য থেমেছিল. তারপর বাড়ি ফিরে গিয়েছিল বিভিন্ন উপদেশ বাণী পেশ করে। কেউ আমাকে কোলে তুলে নেই নি!
এভাবে কয়েক ঘন্টা কেটে যাওয়ার পর দেবী এসেছিলো আমার কাছে। আমাকে কোলে তুলে নিয়ে বলেছিলো। একে আমি নিয়ে গেলাম। কেউ যদি খুঁজতে আসে, তবে পাঠিয়ে দিবি হারলট প্যালেসের ৪০৯ নম্বর রুমে। কারো বুঝতে বাকি ছিল না এটি কোথায়! সভ্য সমাজের অনেকেই সেখানে ছিল, তাদের চোখ চরক গাছ। কিন্তু কেউ কোন কথা বলার সাহস দেখায় নি। বরং দায়মুক্ত হয়েছে ভেবে প্রশান্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলো।
তারপর থেকে আমার বাড়ি হয়েছিলো পতিতালয়। আমার মা হয়েছিল হীরা দেবী, আর আমি হয়েছিলাম পতিতার মেয়ে।
আমাকে নিয়ে যখন সে তার ছোট ঘরে প্রবেশ করেছিল। তখন দরজা খোলার শব্দ শুনে পাশের ঘর থেকে একজন ছুঁটে এসে, পিছু পিছু প্রবেশ করেছিল ঘরে। তাকে আমি রুপা মাসি ডাকতাম। ঘরে প্রবেশ করতেই মা আমাকে তার কোলে তুলে দিয়ে বলেছিল এই দেখ আমার মেয়ে। সে বিহ্বল হয়ে আমাকে দেখছিল। তারপর মা তাকে আমাকে নিয়ে বিস্তারিত বলতে থাকে।
তাদের কথা শেষ হবার আগেই দরজার ওপাস থেকে ভেসে এলো পুরুষ কন্ঠ, কামিনী বৌদি তোকে এখন যেতে বলেছে।
মা খুব বেশি অবাক হয়নি কথাটা শুনে। কারন, সে জানত এমনটাই ঘটবে। যখন সে হারলট প্যালেসের গলি দিয়ে ফিরছিল তখন আচমকাই মুখোমুখি হয়ে যায় রশিদের। রশিদ কামিনী দির বার্তা বাহক। আমাকে লুকাতে চেয়েও শেষ রক্ষা হয় নি। সে ই গিয়ে বাচ্চার কথা লাগিয়েছে কামিনী দির কানে।
মা আর মাসি মুখ চাওয়া চাওয়ি করতে থাকে, শেষে ভ্রু কুঁচকে উত্তর দিয়েছিল যাচ্ছি। তারপর আমাকে মাসির কাছে দিয়ে সেই ঘামার্ত দূষিত শরীর নিয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে গিয়েছিল।
কামিনী রায় এই পুরো হারলট প্যালেসের একচ্ছ অধিপতি। এক এক জন্য তাকে একেক নামে ডাকে। কঠোর ধরনের মহিলা। কারন, কঠোর না হলে এত সব সামলানো যায় না। পুলিশের ঝামেলা, বাবুদের প্যানপ্যানানি আর বেশ্যাদের চুল ছেঁড়াছিঁড়ি সব কিছুতেই তাকে নজর রাখতে হয়। রশিদের মত কয়েকজন সহযোগী থাকলেও, তারা বিশেষ কোন কাজের না। সারাক্ষণ এর ওর ঘরে উঁকি মারা, এর সাথে ওর কথা লাগানো, কামিনী দির কানে কুমন্ত্রণা দেয়ায় তাদের প্রধান কাজ। আর যখন প্রয়োজন হয়, তখন ঠিকই সরে পড়ে।
কামিনী দির ঘরে প্রবেশ করতে না করতেই ভেসে আসে একরাশ সুগন্ধি বাতাস। সাধারণত হারলট প্যালেসে সবখানে শুধু ঈষৎ আর ঘামের পঁচা দূর্গন্ধ পাওয়া যায়। তবে এই ঘরটা ব্যতিক্রম! ঘরটি সব সময় সাজিয়ে গুছিয়ে রাখা হয় এবং ঘরটাতে কিছুটা কারুকাজ করাও রয়েছে। এই ঘরটা সুন্দর, মনরম আর গোছানো রাখার বিশেষ কারন হলো শহরের সভ্য সমাজের বাবুরা তাদের কাম চরিতার্থ করার জন্য রক্ষিতা খুঁজতে প্রথমে এখানেই আসে। এখানে বসে তারা বেশ্যাদের শারীরের হিস্ট্রি নিয়ে বিস্তর গবেষণা করে, দরদাম ঠিক করে।
ঘরে প্রবেশ করতেই হীরা মাকে শুনতে হলো কয়েকশত প্রশ্ন ও একরাশ গালিগালাজ। এটা এখানকার কথা বার্তার অন্যতম উপাদান। গালি ছাড়া কথা বলা এখানে বড্ড বেমানান। মা চুপচাপ সব শুনলেন কিছু বললেন না। কারন, কামিনীদিকে কিভাবে ম্যানেজ করতে হয় তা তার জানা। কিছুক্ষণ পর কামিনী দির মাথা ঠান্ডা হলে মা বুঝিয়েছিল যে কেউ খুঁজতে আসলেই আমাকে দিয়ে দিবে।
হীরা মাকে তের বছর বয়সে এই নিষিদ্ধ পল্লীর খাতায় নাম তুলতে হয়েছিল। সৎ বাপের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে বাড়ি থেকে পালিয়েছিলো সে। তারপর রাস্তায় রাস্তায় এক মুঠো ভাতের অভাবে যখন মরতে বসেছিল, তখন এই কামিনী দিই তাকে আশ্রয় দিয়েছিলো। কিছুদিন ভাল খাওয়া দাওয়া, আর সেবা যত্নের পর সুস্থ হয়ে উঠেছিল। মাস কয়েক পর কামিনী দির কথায় পা রাখে এই ভয়ংকার ব্যবসায়ে। যে ব্যবসায় নিজের শরীরকে তুলে দিতে হয় শুকুরের হিংস্রতার মুখে। প্রতিদিন কয়েকবার ক্ষতবিক্ষত হতে হয় কাঁথায় সুঁই ফোঁড়ানোর মত!!
প্রথমে সে রাজি হয়নি, তবে তার কাছে আর কোন উপায় ছিল না। এই কাজ না করলে তাকে না খেয়ে মরতে হবে অথবা ফিরে যেতে হবে তার সৎ বাপের বাড়িতে। সেটা ছিলো তার কাছে এখানকার (হারলট প্যালেসের) দোযখের চেয়েও ভয়ংকর!
হীরা মার বয়স তখন সবে দশ কি এগারো বছর হবে। একদিন হঠাৎ করেই বাপ তাকে ঘরে নিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়েছিলো। কিছু বুঝে ওঠার আগেই জোর করে তার শরীর থেকে কাপড় সরিয়ে ফেলেছিলো। তারপর তার ছোট শরীরের উপর চালাতে থাকে নির্মাম অত্যাচার। তীব্র ব্যথায় আর্তনাদ করেও শেষ রেহাই হয়নি! তারা কান্না পশুর মনে কোন দাগ কাটেনি! সেদিন তার শরীরের ক্ষতর চেয়ে মনের ক্ষত ছিল ঢের বেশি। কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলনা। সেদিন সে প্রথম আবিষ্কার করেছিলে বাপের আসল রুপ।
তার মা,বাড়ি ফিরে এসে দেখেছিল মেয়ের সে ক্ষত। মেয়ের জন্য কষ্ট অনুভব করে ডু্করে কেঁদে ছিল কিন্তু বিশেষ কিছু করার ক্ষমতা ছিল না তার। কারন হীরা মায়ের আরও তিন ছোট ভাইবোন ছিল। তাদের দুমুঠো ভাতের কথা ভেবে মুখ বুঝে সব সহ্য করেতে হয়েছিল৷ তারপর থেকে প্রতি সপ্তাহেই হীরা মায়ের উপর চলত সৎ বাপের শোষণ। একদিন মা না পেরে মেয়েকে বলেছিল এই নরক থেকে পালাতে!
হীরা মায়ের স্নেহ ভালোবাসায় বড় হতে থাকি আমি। মা যখন অন্য পুরুষের শস্যাসাহী হতে যেত তখন আমাকে রেখে যেত রুপা মাসির কাছে। মা ফিরলে মাসি যেত একই কাজ করতে। দুজনে মিলে পালা করে আমার দেখাশোনা করতে থাকে। মাঝে মাঝে কামিনী দির কাছেও আমাকে রেখে যেত। সেও আমাকে খুব আদর করত।
আমার বয়স যখন চৌদ্দ বছর হলো তখন থেকে সবাই মাকে কথা শুনাতো। বলত আমাকেও এই ব্যবসায়ে নামাতে। আমাকে দিয়ে নাকি বেশি চড়া দাম পাওয়া যাবে। আরও বলত পতিতার মেয়ের তো পতিতা হওয়ায় মানায় ইত্যাদি। মা কারও কথায় কর্নপাত করতো না।
মা ঘরে ফিরে আসলে তার কোলে শুয়ে শুয়ে গল্প শুনতাম। মা আমাকে রুপকথার গল্প শুনাতো। আমি অবাক হয়ে শুনতাম আর তার মুখের দিয়ে অবিকল চেয়ে থাকতাম ঠিক আমার মেয়ে অদ্রিতার মতই। মা বলত একদিন রাজকুমার এসে আমাকে এই অভিশপ্ত দেয়াল থেকে মুক্ত করে নিয়ে যাবে। আমি বিশ্বাস করতাম না। তবে মায়ের অগাধ বিশ্বাস ছিল তার কথার উপর।
সপ্তাহে একটা দিন মা ছুটি নিয়ে আমাকে ঘুরতে নিয়ে যেত। আমরা দূরের কোন স্থানে যেতাম। কারন মা চাইতো না যেন কেউ আমাকে পতিতার মেয়ে ডাকুক। মাঝে মাঝে রুপা মাসিও আমাদের সাথে যেত। আমরা সারাদিন অনেক মজা করতাম একসাথে।
মা আমার জন্য প্রায়ই নতুন নতুন পোষাক কিনে আনতো। আমাকে নাকি সাজলে রাজকন্যার মত লাগে। জানি না সাজলে আমাকে কেমন লাগে? তবে আমি সত্যি আমার মায়ের রাজকন্যা ছিলাম। সে নিজের জন্য তেমন কিছু কিনতে চাইতো না। সারাক্ষণ আমার কি লাগবে সেটা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে উঠত। মাঝে মাঝে আমি রাগ করতাম। তখন সে আমার কপালে চুমু দিয়ে দিত তখন আমি আর রাগ করে থাকতে পারতাম না।
ঠিক রুপকথার রাজপুত্র না হলেও গ্রীষ্মের প্রখরতায় সে একদিন এসেছিল আমাদেরকে অনুসরণ করতে করতে। হারলট প্যালেসের গেটে এসে থমকে দাঁড়িয়েছিল! গেটে দাঁড়িয়ে ছিল স্তব্ধ হয়ে। ঠিক কতক্ষণ সেভাবে ছিল তা আমার জানা নেই। তবে সে যে আমাদের পিছু নিয়েছিল বড় বাজার শপিংমল থেকে, তা আমি জানি। মাকে বলতে চেয়েছিলাম, তবে ঠিক কেন জানি বলা হয়ে ওঠেনি!
তারপর প্রতি সপ্তাহে একদিন করে এসে গেটের সামনে চায়ের দোকানে বসে থাকত। চা খাওয়া ছিল অযুহাত মাত্র। সেখানে বসে থেকে আমার দেখা না পেলেও মায়ের দেখা পেয়ে যেত। আগেই সে অনেকের কাছ থেকে আমার সম্পর্কে অনেক কিছু শুনেছিলো।
হীরা পতিতার মেয়ে, মেয়েও একদিন মায়ের মত পতিতা হবে, কয়লা কয়লায় থাকে চিরকাল, চরিত্র ভাল হবে না প্রভৃতি কত কি যে আমাকে নিয়ে শুনেছিল তা ঠিক আমার জানা নেই!
একদিন মায়ের কাছে সে আমার বিয়ের প্রস্তাব দেয়। ছেলে সুদর্শন, উচ্চশিক্ষিত হলেও, মা প্রথমে রাজি হয়নি। কারন, মা জানতো আবেগে পড়ে সে হয়ত বিয়ে করতে চায়ছে। এই আবেগ চিরদিন থাকে না, একদিন কালো বিভৎসত রুপ নেয়। সরাসরি না বলে দিয়েছিল মা। মা ভেবেছিলো ঘটনা এখানেই মিটে যাবে। তবে তা ঘটেনি! টানা ছয় সাত মাস প্রতি নিয়ত সে মাকে বোঝাতে চেষ্টা করে। তাতেও বিশেষ কিছু হয় নি বলে শেষমেশ কামিনী দির পিছে পড়ে যায়।
কামিনী দির জোরাজোরিতে মা বিয়েতে রাজি হয়েছিল৷ তবে, মায়ের বিশেষ কিছু শর্ত ছিল। তার মধ্যে অন্যতম ও প্রধান শর্ত ছিল, মেয়েকে মায়ের থেকে আলাদা করা যাবে না। অর্থাৎ মেয়েকে মায়ের কাছে আসতে বাঁধা দেয়া যাবেনা। দ্বিতীয়ত, পতিতার মেয়ে বলে গালিগালাজ করা, গায়ে হাত তোলা যাবে না। তৃতীয়ত, বিয়ের অনুষ্ঠান হবে এই হারলট প্যালেসে (পতিতালয়ে)। আরও কি কি ছিল তা আমার মনে নেই।
আমাদের বিয়ে হয়েছিল শীতের মাঝামাঝি সময়ের। আমার বয়স তখন ষোলো। একদিকে বাঁধা ভাঙ্গা আবেগ, পাখির মত স্বাধীন হতে চাওয়া, কল্পনায় দানা ঝাপটানো এবং যৌনতার তীব্র তৃষ্ণা। অন্যদিকে ভয়ে কুঁকড়ে যাওয়া, দ্বিধা-দন্দ পিষ্ট হওয়া তো ছিলোই। তবে আরও একটা বিশেষ ভয় ছিলো আমার, মাকে ছেড়ে থাকার।
তখনও পর্যন্ত মায়ের বুকে মাথা না রাখলে আমার ঘুম হত না!
প্রশ্নের বেড়া জালের উত্তর খুঁজে পাওয়া আগেই নিজেকে আবিষ্কার করলাম বিশাল এক বড় বাড়িতে। আমি আর অদ্রিতার বাবা, এই নিয়ে আমার ছোট্ট সংসার। সে সরকারী কর্মচারী, চাকরি সূত্রেই এই বাড়ি পেয়েছে সে। তার বাবা, মা, ভাইবোন কেউ এই পৃথিবীতে বেঁচে নেই। রয়েছে এক মামা, তবে সে গ্রামে থাকে। মাঝে মাঝে অদ্রিতার বাবা তাকে কিছু টাকা পাঠায়।
বিয়ের পর থেকে অদ্রিতার বাবাকে প্রতিদিন নতুন করে আবিষ্কার করতাম। মানুষের কথা এত মধুর হতে পারে আগে জানতাম না। তার কথার প্রেমে পড়ে যেতাম বারবার। সে আমাকে খুব ভালবাসত। রাতে তার বুকে মাথা রেখে সুখ অনুভব করতাম।
মাঝে মাঝে আমরা দু'জন মাকে দেখতে যেতাম, মাকেও আসতে বলতাম আমাদের সাথে। তবে মা আসতে চায়তো না। অদ্রিতার বাবাও মাকে আমাদের সাথে থাকার জন্য খুব জোর করতো। আমি বাড়িতে একা থাকি তাই মা থাকলে আমার ভাল লাগবে এ কথা ভেবে। তবে, মা রাজি কখনও হয়নি।
অদ্রিতা কখন ঘুমিয়ে পড়েছিল খেয়াল করা হয়নি। কলিং বেলের শব্দ শুনে আমার চেতনা হলো। দরজা খুলে খুব অবাক হলাম! আজ এই প্রথম মা এসেছে.....!!!!

Comments

Popular posts from this blog

What Makes Me Happy!!!

Augusta Ada: The first programmer

1.1 Writing: As A Communication Tool